জাগছে রাত জলমহালে
জল থৈ থৈ বানের তোড়ে
ঘর সংসারের বাঁধন ছিঁড়ে
নিঃস্ব বসত গিলছে পানি
উজান স্রোত যাচ্ছে হানি!
কলার ভেলা ডিঙি নায়ে
আনাজপাতি উজান বায়ে
শুকনো মাটির ঠাঁই তালাসে
ভাসছে মানুষ বাঁচার আশে।
দুর্নীতি রোগ বাড়ছে ত্রাণে
আমজনতারা সবই জানে
আইন কানুন আচার বিচার
ঘুষের জোরে পাচ্ছে ছাড়।
মহামারীর বেকার জালে
বাড়বে অভাব ছলে বলে
মরলে ভুখা যায় কি আসে
মানবতা থাকে না পাশে।
মুখের লোকমা লুটছে যারা
চোখ থাকিতেও অন্ধ তারা
কোষাগারের আগার তলার
লোভের রসদ হচ্ছে পাচার।
নেইতো দেখার সমাজপতি
কোথায় সেই দুখের সাথী
স্বাধীন বাংলায় অবহেলে
জগছে রাত জলমহালে।
পলির বুকে স্বপ্ন বোনা
জল ছলছল বানের শেষে বাঁচার স্বপ্ন নিয়ে
বসত ভিটা জলকাদায় ফিরছে শোক সয়ে।
আষার শ্রাবণ মেঘ বালিকা নূপুর বাঁধে পায়
আওলা বাতাস ঘূর্ণি তোলে অঝর বরিষায়।
ক্ষণে ক্ষণে রৌদ্র মেঘে তুমুল লড়াই চলে
উদলা গায়ে সূর্যমুখি পড়েছে লাজে ঢলে।
ঈশান মেঘে বজ্রপাতে পুড়ছে সবুজ ছায়া
নীলাআকাশ সাজায় সফেদ মেঘের মায়া।
শাপলার বুকে জ্যোৎস্না ঝরে ইলশেগুঁড়ি
আকুল তিয়াসে রয় নৌঘাটের নাইওরী।
তীর ছুঁয়ে পলির বুকে হবে শুরু স্বপ্ন বোনা
লাঙ্গল ফলায় তুলবে কৃষাণ ফসলি সোনা।
ভাটির গাঙে জাগছে চর
বর্ষা গেলো শরত গেলো হেমন্তে কাটে জল
তীর ছুঁয়ে উড়ায় আঁচল সবুজিয়া মখমল।
উজান গাঙে দোল দুলুনি জলকেলিতে সুখ
ভাটির গাঙে জাগছে চর পলি মায়ের মুখ।
নিশির শিশির মুক্তোরাশি ঝরছে দুর্বাজালে
আসছে ছুটে পরিযায়ী নিবিড় প্রনয় ছলে।
পাখপাখালি বাঁধবে বাসা সবুজ বৃক্ষ শাখে
উড়বে ভ্রমর প্রজাপতি ফুলের রেণু মেখে।
খেজুর রসে উঠবে ধোঁয়া পিঠা পুলির ঘ্রাণ
ঢেঁকির তালে মিহি কন্ঠে বারোমাসি গান।
জাগবে বসত উদাস গৃহী অধীর প্রহরী
জলের ঘাটে আত্মহারা ফিরলে ঝিয়ারি।
আসছে শীত হিমেল হওয়া সিক্ত জলে
কুয়াশা ঢাকা হীরক মালায় সূর্য জ্বলে।
ঋতুর খেয়ার আসা যাওয়া পালাবদলে
নতুন রূপে সাজবে ধরা ফুল ও ফসলে।
আষাঢ় শ্রাবণ বাংলার ঘরে
জল থৈ থৈ আসছে তেড়ে
আমজনতার স্বস্তি কেড়ে
বাদলা হাওয়ায় ইলশেগুঁড়ি
নিভছে আগুন শূণ্য হাড়ি
হাট বাজারে গিলছে টাকা
সদাই-পাতি পকেট ফাঁকা।
পচলো আনাজ ডুবলো ধান
আম্পান ঝড়ে এলো যে বান
ব্যস্ত সবাই নেই কেউ দেখার
আমি তুমি সে কে কবে কার
স্বার্থের মায়ায় উড়ছে জীবন
ভাবে না কায়া হারাবো কখন!
আষাঢ় শ্রাবণ বাংলার ঘরে
রোগ বালাই আর ক্ষুধায় মরে।
প্রথম কদম ফুল বাদল দিনে
হারিয়েছে পথ আজ বন্ধু বিনে
কবির কাব্য জাগে না প্রাণে
তোলে না সুর মায়াবী গানে।
উড়াল মেঘের নায়ে
জলের বুকে ঢেউয়ের নাচন
ভাঙ্গে নদীর কূল
শোকের মাতম বুকের মাঝে
ঝরায় স্মৃতির ফুল।
গ্রীষ্ম গেলো বর্ষা গেলো
উড়াল মেঘের নায়ে
চোখ ধাঁধানো কাশের বনে
শরত লুটায় বায়ে।
জল বালিকার সূর্যতিয়াস
সাত সমুদ্রের জলে
অশ্রু শুকায় জোয়ার বানে
উত্তাল হলাহলে।
দূর গগনের ঈশান কোনে
জ্বলছে অনল জালে
উড়বে বায়ু ছিঁড়বে বাঁধন
সুখ স্বপ্নের পালে।
সুলতানা রিজিয়া::কবি, লেখক, প্রাবন্ধিক, সংগঠক ও প্রকাশক। তিনি দীর্ঘদিন ধরে নন্দিনী নামক একটি সাহিত্য পত্রিকা বের করছেন। এছাড়া তার রয়েছে প্রকাশনা হাউস সম্রাজ্ঞী। তার প্রকাশিত একক গ্রন্থের সংখ্যা ২৩ টি। সাহিত্য ও সাংগঠনিক অবদানের জন্য পেয়েছেন ত্রিশটির বেশি সম্মাননা ও পদক।
ওমেন্স নিউজ ডেস্ক/