পাঠ প্রতিক্রিয়া: কাজী দিলরুবা রহমানের বড় গল্প `মুনিয়া’

কাজী দিলরুবা রহমান

‘মুনিয়া’ গল্প নিয়ে বায়েজিদ হোসেনের পাঠ প্রতিক্রিয়া

(জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল ওমেন্স নিউজের শুক্রবারের সাহিত্য পাতায় দুই পর্বে প্রকাশিত হয়েছে জনপ্রিয় লেখক কাজী দিলরুবা রহমানের ‘মুনিয়া’গল্পটি। গল্পটি অনেকেরই ভালো লেগেছে। অনেকেই সেটা সানন্দে প্রকাশও করেছেন। তবে কেবল অনুভূতি ব্যক্ত করেই ক্ষান্ত হননি তরুণ কবি ও লেখক বায়েজিদ হোসেন। তিনি এটি পড়ার পর একটি পাঠ প্রতিক্রিয়া লিখে পাঠিয়েছেন ওমেন্স নিউজের নির্ধারিত মেইলে। এজন্য ‘মুনিয়া’গল্পের লেখক এবং এর আলোচক দু’জনকেই ধন্যবাদ।)

কাজী দিলরুবা রহমান একজন সমাজ সচেতন লেখক। তিনি বর্তমান সমাজের চলমান ইস্যুতে নিজের দৃষ্টিভঙ্গী দৃঢ়তার সঙ্গে ব্যক্ত করেছেন তার ‘মুনিয়া’ গল্পে। অত্যন্ত সাবলীল ভাষায় একজন নারী জীবনের দুঃখ ব্যথা অন্য একজন নারীকে আশ্রয় করে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। তৃষা একক কোন নারী না, তিনি এক সংসারী নারীর প্রতীক যাদের স্বপ্ন লুট হয়ে যায় সংসার জীবনের প্রথম প্রহরেই। কিন্তু সমাজের ভয়,বাস্তবতার ভয় অথবা বিবর্ণ হওয়া স্বপ্ন আবার যদি প্রজাপতি হয়ে ডানা মেলে এই আশায় নীরবে সয়ে যায় তাদের যন্ত্রণা। লেখক ‘মুনিয়া’ গল্পে মুনিয়াকে হাজির করে তৃষার ভেতরের কষ্টকে সামনে এনেছেন। মুনিয়ার মনের জমা ব্যথাকে নিজের ব্যথার সাথে মিলিয়ে তৃষা নিজেকে মুনিয়া ভাবতে শুরু করেছে। দুজনের দুটি আকাশ। একজনের আছে আর্থিক স্বচ্ছলতা অন্য জনের আছে অভাব। কিন্তু এই দুই আকাশের দুটি নক্ষত্রের একই স্থানে মিলন হয়েছে-সেটা হলো তাদের স্বামী সুখে ভাগ বসেছে, যদিও তা ভিন্ন ভাবে। কাজী দিলরুবা রহমান তার গল্পের পরতে পরতে বাস্তবতাকে চমৎকার ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।

প্রেম-ভালোবাসাহীন সংসারে নারী পুরুষের একত্রে বসবাস হলো পুতুলের সংসার। জৈবিক চাহিদা পুরণ হলেই তারা আবার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় যদিও সে মিলনে তৃপ্তি নেই, নেই কোনও সম্মান। কেননা এই সংসারে নারী যে কেবলই তার পুরুষ সঙ্গীর ক্রীড়ানক !পুরুষতান্ত্রিক এই সমাজে নারী চাইলেই তো নিজের জৈবিক চাহিদাটাও পুরণ করে নিতে পারে না! ফলে তার হৃদয়কে লঙ্কা বানিয়ে জ্বলতে হয় সদা ৷

‘রাতে তৃষার কিছুতেই ঘুম আসতে চায় না, মুনিয়ার কথাগুলো বার বার ঘুরপাক খেতে থাকে। মুনিয়ার চাওয়া-পাওয়া ইচ্ছে এ সবই যে তৃষারও। না আর ভাবতে পারে না তৃষা, সে কি করবে? সে কি অন্য নারীদের মত পরকীয়ায় আসক্ত হবে? কি তৃষা তা চাইলেও করতে পারে না, কারণ তৃষার মন এগুলোতে কখনো সায় দেয় না। তৃষা ভাবতে থাকে কেন সে কিছুই করতে পারে না? ঘর ভাঙতে পারে না, মুনিয়ার মত ভালবাসা ছিনিয়ে নিতে পারে না, অন্য কোনো পুরুষকে অবৈধভাবে ভালবাসতেও পারে না। এভাবে প্রায় এক সপ্তাহ কেটে যায়।’ কথাগুলো আবহমান বাংলার নারীদের সংসারে জীবনের সবচেয়ে সত্য কথন। গল্পের মুনিয়া স্বামী সোহাগ থেকে বঞ্চিত হয়ে বটি হাতে নিয়ে জোর করে স্বামী সোহাগ আদায় করলেও তৃষা তা পারে না অথচ তার শরীরও চায় স্বামী সোহাগ ৷ একজন শিক্ষিত, রুচিশীল নারীর জৈবিক এবং একই সঙ্গে মানসিক টানাপোড়েনের এই দিকটি খুব চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক ৷ ‘মুনিয়া’গল্পে আঞ্চলিক ও প্রমিত ভাষার সংমিশ্রনে কথোপকথন লেখিকার ভাষা জ্ঞানের পারদর্শীতার চমৎকার স্বাক্ষর রেখেছে ৷

গল্পের প্রথম অংশের লিঙ্ক- কাজী দিলরুবা রহমানের বড়গল্প ‘মুনিয়া’

‘মুনিয়া’ গল্পের আরো একটি বিশেষত্ব হলো 'যৌনতা' ৷ আমাদের দেশের বেশির ভাগ লেখক-লেখিকা যৌনতাকে 'ট্যাবু' বানিয়ে রেখেছেন ফলে গল্পে বা কবিতায় ঢাক-ঢাক গুড়-গুড় একটা ভাব থাকে যা লেখার শ্রীকে নিচে নামিয়ে দেয়। কিন্তু ‘মুনিয়া’গল্পে লেখক যৌনতাকে 'ট্যাবু' হিসাবে পরিচয় না করিয়ে বরং স্বাভাবিকভাবেই উপস্থাপন করেছেন যা তার গল্পের মানকে আরো উন্নত করেছে ৷

গল্পের শেষে লেখক কাজী দিলরুবা রহমান তার মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন খুব চমৎকার ভাবে। একজন নারী সারা জীবন নীরবে সব কিছু সয়েছে হঠাৎ সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আলাদা হওয়ার ৷ তুষের আগুনে ধীরে ধীরে পোড়ার চেয়ে নিজে স্বাধীনভাবে বাঁচার যে স্বপ্ন তৃষা দেখেছে তাতে তাকে  এমন সাহসী করে দাঁড় করানোই হলো লেখকের স্বার্থকতা ৷ গল্পে বেশ কিছু জায়গায় গতানুগতিকতা লক্ষ্য করা গেছে যা ত্যাগ করতে পারলে লেখা হতো আরো প্রাণবন্ত ৷

কাজী দিলরুবা রহমান সাহিত্য জগতে অবাধে বিচরণ করুন ৷ পাঠকেরা আপনার লেখা থেকে জারক রস সংগ্রহ করুক এবং আরো পাঠকপ্রিয় হয়ে উঠুন আপনি নিজেও। আপনার জন্য অনেক শুভকামনা। আশা করছি ভবিষ্যতে তিনি আমাদের দারুণ সব নতুন নতুন গল্প উপহার দেবেন। ‘মুনিয়া’ পাঠের পর লেখকের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক বেড়ে গেছে।

লেখক পরিচিতি: তরুণ লেখক বায়েজিদ হোসেনের জন্ম ঝিনাইদহ জেলায়। খুব অল্প বয়স থেকেই তার কবিতা লেখায় হাতেখড়ি। বিভিন্ন জাতীয় ও অনলাইন পোর্টালে নিয়মিত লিখছেন। কেবল কবিতা নয়, লিখছেন গল্প, উপন্যাসও। তার একাধিক কবিতাগ্রন্থ, উপন্যাস ও গল্পগ্রন্থ প্রকাশের অপেক্ষায় আছে ৷ তিনি তার লেখার মাধ্যমে সমাজের অসঙ্গতি তুলে ধরার চেষ্টা করেন।

চাইলে পড়ে দেখতে পারেন আলোচিত গল্পটি- কাজী দিলরুবা রহমানের বড়গল্প ‘মুনিয়া’

ওমেন্স নিউজ সাহিত্য/