হিমাংশুর আত্মহত‌্যায় চাপা পড়ছে সাবিত্রী হত‌্যাকাণ্ড!

হাসানুজ্জামান হাসান, লালমনিরহাট

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার ভেলাগুড়ি ইউনিয়নের পুর্ব কাদমা গ্রামের গৃহবধূ সাবিত্রী রানীর হত্যাকাণ্ডের সাথে কে বা কারা জড়িত তা নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। সাবিত্রী রানীর স্বামী হিমাংশু রায় ও তার বড় মেয়ে প্রিয়াংকাসহ এলাকাবাসীর পারস্পরিক বিরোধী বক্তব্যে এ ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয়দের দাবি এ হত্যাকাণ্ডের সাথে যে বা যারাই জড়িত থাক তাদের আইনের আওতায় আনা হোক। পাশাপাশি পুলিশ হেফাজতে হিমাংশু রায়ের আত্মহত‌্যায় পুলিশের দায়িত্ব পালনে অবহেলা ছিলো কিনা তা নিয়েও তদন্তের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তবে অনেকেই সন্দেহ করেছেন সবিত্রী হত্যাকাণ্ডের সাথে তার স্বামী হিমাংশু রায় জড়িত থাকতে পারে এবং এ ঘটনায় কেউ না কেউ হিমাংশু রায়কে সহযোগিতাও করছেন। আর হিমাংশু রায়ের বাবা বলছেন, আমার ছেলে আআত্মহত‌্যা করেছে। ছেলের মৃত্যু নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই। ছেলে আত্মহত‌্যা করেছে তা মেনে নিয়েই সৎকার করেছি।

জানা গেছে, গত শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) ভোর রাতে ওই এলাকায় বিশ্বেস্বর রায়ের পুত্র হিমাংশু রায়ের স্ত্রী সাবিত্রী রানী নিহত হন। সকাল বেলা হিমাংশু রায় প্রতিবেশীদের ডেকে বলেন, তার বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে। ডাকাতরা তার বাড়ি থেকে ৭২ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যাওয়ার সময় তার স্ত্রীকে হত্যা করেছে। পরের দিন সকালে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে এবং সন্দেহজনক কারণে ওই গৃহবুধর স্বামী হিমাংশু রায়কে জিজ্ঞাসাবাদের জন‌্য আটক করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। থানায় নারী ডেস্ক রুমে তাকে জিঞ্জাসাবাদের জন‌্য রাখলে সেই রুমে আত্মহত‌্যার চেষ্টা করেন হিমাংশু রায়। তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তার মৃত‌্যু হয়।

পুলিশ হেফাজতে জিঞ্জাসাবাদে হিমাংশু রায় পুলিশকে জানান, তিনি বাড়ির পাশের এক অনুষ্ঠান থেকে ভোর সাড়ে তিনটার দিকে বাড়ি ফিরে তার বড় মেয়ে প্রিয়াংকার কাছে জানতে পারেন তার স্ত্রীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পরে ঘরের পাশে তুলশী গাছের নিচে তিনি তার স্ত্রী সাবিত্রী রানীর লাশ দেখতে পান তিনি।

তবে হিমাংশু-সাবিত্রীর বড় মেয়ে প্রিয়াংকা জানান, ভিন্ন কথা। তিনি কখনও বলেন, বাবা রাত ১২টার দিকে বাড়িতে আসেন। তখন মা-সহ আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। আবার কখনও বলছেন- বাবা আসার আগে কালো কোর্ট পড়া একজন লোক এসে মাকে গলাটিপে হত্যা করে। তাহলে সেই লাশ ঘরের বাইরে কিীভাবে গেল, এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রিয়াংকা জানান, তখন তিনি ঘুমে ছিলেন।

এদিকে প্রতিবেশীরা জানান, হিমাংশুর বাড়িতে মধ্য রাতে ডাকাতি হয়েছে এমন কোনো চিল্লাচিল্লা আমরা শুনতে পারি নাই। সকাল বেলা হিমাংশুর মুখে শুনি রাতে নাকি ডাকাতরা তার স্ত্রীকে হত্যা করে টাকা নিয়ে গেছেন।

সরেজমিনে ওই এলাকা গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায় ভিন্ন তথ্য। হিমাংশু রায় ছিলেন বেকার এবং নিয়মিত জুয়া খেলতেন। এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় প্রায়ই স্ত্রী সাবিত্রী রানীকে নির্যাতন করতেন। ঘটনার দিনও বাড়ির পাশে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের অজুহাতে জুয়া খেলে ভোর রাতে বাড়ি ফিরেন হিমাংশু।

এলাকাবাসী বলছেন, যদি হিমাংশুর বাড়ি ডাকাতি হয় তাহলে ঘটনার সময় বা তার পরে কোনও হৈ চৈ শোনা গেল না কেন? আমরা প্রতিবেশীরাও তো বুঝলাম না যে হিমাংশুর বাড়ি ডাকাতি হয়েছে। হিমাংশু-সবিত্রীর বড় মেয়ে প্রিয়াংকা বলেন, একজন কালো কোর্ট পড়া লোক এসে তার মাকে গলা টিপে ঘরের ভিতরেই হত্যা করেছে। প্রিয়াংকার কথা যদি সত্য হয় তাহলে সেই লাশ ঘর থেকে বাহিরে বের করলো কে ? অনেকেই সন্দেহ করেছেন সাবিত্রী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার স্বামী হিমাংশু রায় জড়িত থাকতে পারেন এবং এ হত্যাকাণ্ডে কেউ না কেউ হিমাংশু রায়কে সহযোগিতাও করেছেন।

এ বিষয়ে হিমাংশু রায়ের পিতা বিশ্বেস্বর রায় বলেন, আমার ছেলের বউয়ের হত্যার সঙ্গে আমার ছেলে জড়িত থাকলেও থাকতে পারে। সেটা যেহেতু দেখি নাই এ নিয়ে কি বলি? আমার ছেলে আত্নহত‌্যা করেছে এবং তার মৃত্যু নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই। ছেলে আত্মহত‌্যা করেছে তা মেনে নিয়েই সৎকার করেছি।

তবে নিহত সাবিত্রী রানীর ভাই খগেন চন্দ্র বলেন, আমার বোনকে হত্যা করা হয়েছে। তবে ভাগিনী দু’টির ভবিষ্যত চিন্তা করে এ নিয়ে আর বাড়াবাড়ি করতে চাই না। আমরা নিজেদের মধ্যে মীমাংসা করে নিয়েছি। তবে আমার বোনের হত্যাকাণ্ডের সাথে একাধিক ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারে।

লালমনিরহাট পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা বলেন, সাবিত্রী হত্যাকাণ্ড ও পুলিশ হেফাজতে হিমাংশু রায়ের  আত্মহত‌্যায় বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে পুলিশের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ওমেন্স নিউজ ডেস্ক/