মাহমুদা আকতারের বড় গল্প ‘জলরঙ ভালোবাসা’

মাহমুদা আকতার

জলরঙ ভালোবাসা

-তুমি কি চাও?
-কিছু না। কেবল তোমাকে কিছুক্ষণ দেখবো।
আমার কিছু কাজ করার ছিল। কিন্তু কেউ আমার দিকে তাকিয়ে থাকলে আমার মনোযোগ আসে না। কিন্তু সে কথা তো তাকে বলা যাবে না। অভিমানী পুরুষ, হুট করে মন খারাপ করতে পারে। তাই ঘুরিয়ে বললাম- আমাকে দেখতে তোমার কতটা সময় লাগবে?
-সেটা তো বলতে পারছি না। এক মিনিটও হতে পারে আবার ঘণ্টাও পেরিয়ে যেতে পারে।
-ওরে বাবা তাহলে তো মুশকিল!
-কেন তুমি কোথাও বেরোচ্ছ নাকি?
-না, এমনিতেই জিজ্ঞেস করjvম। হাই তুলতে তুলতে বললাম।
উনি উঠে চলে গেলেন। অভিমান হয়েছে বোধহয়। শিল্পীদের মান অভিমান আর আবেগ একটু বেশি থাকে, অন্যদের তুলনায়। সেই হিসাব করলে আমারও তো আবেগ বেশি থাকার কথা। হই না অজ্ঞাত, অখ্যাত তাতে কে! ছবি তো আঁকতে জানি এবং এখনও সেই চেষ্টাই করে চলেছি। কিন্তু আমার কোনও আবেগ নাই। অনেকটা কাঠখোট্টা টাইপের মানুষ আমি। এই যে জাফর যখন তখন আমার কাছে ছুটে আসে। আকার ইঙ্গিতে কিছু বলতে চায়-এতে আমার কোনই হেলদোল নেই। জাফর আসে প্রায়ই। এটা সেটা নিয়ে গল্প করে, বেশিরভাগই আাঁকাআঁকি নিয়ে। হালকা চা নাস্তা খায়। কোনও কোনোও দিন বেলা বেশি হলে লাঞ্চ করে যায়। আবার কোনও কোনও দিন একদম খালি মুখেই উঠে যায়। আমার কাছে তার সব আচরণই স্বাভাবিক মনে হয়। আমি ওর কোনও কিছুতেই প্রতিক্রিয়া দেখাই না। আসলে তার প্রতি আমার কোনও রকমের দুর্বলতা নেই। সোজা কথায় বলতে গেলে আমি তাকে ভালোবাসি না। সে আমাকে ভালোবাসে কিনা সে ব্যাপারেও আমার কোনও আগ্রহ নেই। অবশ্য সে রকম হলে আমি তো টের পেতাম।
মেয়েরা আর যাই হউক ভালোবাসা চিনতে ভুল করে না। তাহলে আমাদের এই সম্পর্কটাকে কি বলে- ভালোলাগা, বন্ধুত্ব নাকি কেবলই আসক্তি? আমার দিক থেকে এই তিনটার কোনটাই যে নয়, সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। তাহলে এটাকে কি বলে? আমি তো চাইলে তাকে এড়িয়ে যেতে পারি, যে কোনো অজুহাতে। কিন্তু সেটা তো আমি কখনই করবো না। তাহলে আমি কি তার সান্নিধ্য পছন্দ করছি নিজেরই অজান্তে- কী জানি! মানুষের মন কত যে জটিল। তাছাড়া মানুষের সঙ্গে মানুষের কত ধরনের সম্পর্ক হয়, তারা যদি হয় নারী ও পুরুষ।
তবে বিয়ে ও প্রেম নিয়ে আমার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গী আছে। আমি প্রচণ্ড ভালোবাসাবাসি না হলে কাউকে বিয়ে করবো না। আর সাদামাটা ম্যাড়ম্যাড়ে টাইপ নয়, প্রেমটা হবে গভীর-যাকে বলে না দেখলে মরে যাব অবস্থা। ভালোবাসা তো দূরের কথা এখনও র্পযন্ত এমন কোনও পুরুষের দেখা পাইনি যাকে দেখলে বুকের গভীরে তিরতির অনুভুতি তৈরি হয়। তবে আমি এখন জাফরকে নিয়ে ভাবছি। জাফর যদি বিবাহিত না হতো তাহলে কি ওর সঙ্গে আমার ‘তোমাকে না পাইলে মরয়িা যাইবা’ টাইপ প্রেম হতো। তেমন সম্ভাবনা তো উড়িয়ে দেয়া যায় না, যায় কি? যদিও আমি তো কখনও কোনও বিবাহিত পুরুষকের সাথে সম্পর্কে জড়াবো না- প্রেম বিয়ে সেগুলোর তো প্রশ্নই আসে না। নিজের মাকে দেখে তো অন্তত এটুকু বুঝেছি এই ধরনের সম্পর্কের কারণে একটা মেয়েকে কতটা কষ্ট পেতে হয়। একজন পুরুষ একই সঙ্গে একাধিক নারীকে ভালোবাসতে পারলেও একজন নারীর পক্ষে এটা অত সহজ নয়। আর সেই নারীর যদি আগের পক্ষের সন্তান থাকে।
হ্যাঁ আমি আমার মায়ের প্রথম স্বামীর সন্তান। বাবার সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার সময় মা আমার হাত ধরেই বেরিয়ে এসেছিলেন। এরপর জসিম আঙ্কেলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান। জসিম আঙ্কেলের স্ত্রী আর ছেলে ছিল। এ নিয়ে মায়ের তেমন আপত্তি ছিল না।
জসিম আঙ্কেল আমাদের বাসায় কখনও রাত কাটাতেন না। এমনকি রাত ১২টা বাজলেও নিজের বাড়ি ফিরতেন তিনি। তবে মাকে যথেষ্ট সময় দিতেন। মাকে নিয়ে দিন কয়েকের জন্য দূওে কোথাও বেড়াতেও যেতেন। তখন আমি নানুর কাছে থাকতাম। ধারে কাছে গেলে আমিও যেতাম কখনও কখনও তাদের সাথে। জসিম আঙ্কেলের সাথে মায়ের সম্পর্কটা ভালোই ছিল। আমাকেও তিনি আদর করতেন যথেষ্ট। আমাদের বাসায় আসার সময় আমার জন্য প্রচুর খেলনা আর চকলেট নিয়ে আসতেন আমার জন্য। কিন্তু দু’জনের সম্পর্ক হঠাৎ করেই খারাপ হতে লাগলো। তখন জসিম আঙ্কেল আসলেই আগের আনন্দ উপচে পড়া আবেশটা ছিল না, কেমন আবছা আগোছানো। আস্তে আস্তে সেটা চেঁচামেচিতে গিয়ে ঠেকলো। আসলে মা যখন নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠায় অধীর হলেন তখনই বাধলো ঠোকাঠুকি। নিজের স্ত্রীকে ছেড়ে মাকে বিয়ে করতে রাজি ছিলেন না জসিম সাহেব। যদিও মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক করার শুরুর দিকে এমনটাই কমিটমেন্ট ছিল তার। শেষে যা হওয়ার ছিল তাই হলো। বাবার সঙ্গে আলাদা হওয়ার সময় যতটা ঝামেলা হয়েছিল এখানে তেমন কিছুই হলো না। জসিম আঙ্কেলের আমাদের বাসায় আসা কমতে কমতে একদিন স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেল। এরপর থেকে এতবড় বাড়িটাতে আমরা মাত্র দু’জন বাসিন্দা। মা সারাদিন অফিস করে সন্ধায় ঘরে ফেরেন। আর আমি ক্লাস, বন্ধুদের আড্ডা ও ঘুরাঘুরি আর ছবি আঁকা নিয়ে সময় কাটাই। কোনও কোনও দিন কোথাও যাওয়াই হয় না। কেবল ঘরে বসে থাকি। আসলে বসে থাকি না ছবি আঁকি। এখন পর্যন্ত ছবি আঁকাই আমার একমাত্র প্রেম। এরই মধ্যে একদিন জাফরের সঙ্গে পরিচয় হলো আমার। আমি তখন তাকে জাফর স্যার বলে সম্বোধন করতাম।
জাফরের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র আরজু ম্যাডাম। চারুকলাতে কয়েকজন শিল্পীর প্রদর্শনী চলছিল। আমরা তখন নতুন ভর্তি হয়েছি। আরজু ম্যাডাম ছবি দেখাতে নিয়ে গেছেন আমাদের। ঘুরতে ঘুরতে একটা ছবির সামনে দাঁড়িয়ে গেলেন আরজু ম্যাডাম।
– ছবিটা কেমন লাগে তোমাদের? আমরা তখন মনোযোগ দিয়ে ছবিটা দেখতে থাকলাম। অ্যাবসট্যাক্ট আর্ট হলেও বিষয়বস্ত স্পষ্ট। ভালো কওে খেয়াল করলে বোঝা যায় একটা রমনীর ছবি, ¯œানরত রমনী। আমি বললাম
– সুন্দর ছবি।
– তোমরা কি জান এই আর্টিস্ট চারুকলার ছাত্র না। চারুকলায় না পড়েও কিন্তু ভালো ছবি আঁকা যায়।
– কী বলেন ম্যাডাম!
আমরা অবাক হলাম
– দাঁড়াও আর্টিস্টের সাথে তোমাদের পরিচয় করিয়ে দেই। ম্যাডাম ফোন করার দশ মিনিটের মধ্যে তিনি এসে হাজির।
– এই হলেন আর্টিস্ট জাফর। সাইন্সের স্টুডেন্ট হয়েও কত ভালো ছবি আঁকে দেখ।
– সব আপনাদের ম্যাডামের কৃতিত্ব। চারুকলার শিক্ষিকা যদি হাতে ধরে ছবি আঁকা শেখায় তাহলে স্যার কি লাগে নাকি!
সেদিনই জানলাম আরজু ম্যাডামের স্বামী জাফর। আর জানলাম তাদেও প্রেম আর ভালোবাসার বিস্তারিত। আরজু ম্যাডাম গল্পচ্ছলেই বললেন সেসব কথা।
জাফরের বিষয় ছিলো ইঞ্জিনিয়ারিং। তবে ওর ছিলো ছবি আঁকার নেশা । আঁকাআঁকিতে আগ্রহ থাকার কারণেই এক বন্ধুর মাধ্যমে আরজু ম্যাডামের সঙ্গে পরিচয় তার। পরিচয় থেকে প্রণয় এবং পরিণতি গড়াতে খুব বেশি সময় লাগেনি। এইসব গল্প ডিপার্টমেন্টের পুরনোদের মোটামুটি জানা। আমরা মাঝে মধ্যে আরজু ম্যাডামের বাসায় যেতাম। তখন ম্যাডাম ও তার স্বামী জাফর-দুজনের সঙ্গেই দেখা হতো। কখনও কখনও চলতো জম্পেস আড্ডা। বলাবাহুল্য আড্ডার অবধারিত বিষয় পেইন্টিং। দেশ বিদেশের নামী শিল্পীদের নিয়ে কথা বলতো জাফর। ওর এ বিষয়ে অনেক পড়াশোনা। ফাঁকে ফাঁকে চলচ্চিত্র কিংবা কোনও ভালো উপন্যাস বা কবিতা নিয়েও কথা হতো। আমার তো আঁকাআঁকি আগে থেকেই ভালো লাগতো। জাফরের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর সেই নেশার পাত্রে যুক্ত হলো সার্থকতা। নানা বই পুস্তক পড়া, গল্প, আড্ডাবাজি করতে করতে কখন যে আমাদের সম্পর্ক আপনি থেকে তুমিতে গড়িয়েছে, বুঝতেই পারিনি। আরজু ম্যাডাম মাঝে মধ্যে মজা করে বলতেন- এই ছেলেটা আমার স্টুডেন্টদের বারোটা বাজিয়ে দিতে চাইছে। আমার সাবজেক্টে যদি একজনও ফেল করে তাহলে দেখবে তোমাকে আমি কি করি!
আসলে এসব মজা করে বলতেন আরজু ম্যাডাম। ওর উদ্দেশ্য ছিলো জাফরকে খেপানো। ওদের এসব খুনসুটি বেশ লাগতো। ততদিনে শিক্ষক থেকে বন্ধুতে নেমে এসেছে জাফর।
তখন জাফর আমাদের বাসায় নতুন নতুন আসছে। মা একদিন ডেকে বললেন-
– লোকটা কে?
– মা একজন বড় আর্টিস্ট অনেক ভালো ছবি আঁকেন। আর একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়ায়।
আমি জাফরের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে গেলাম। মা কেবল শান্ত স্বরে জানতে চাইলেন-
– ম্যারিড না আনম্যারিড
– কি বলো বিবাহিত। একটা মেয়ে আছে- তিন বছরের।
– আমার মেয়ে যেনো কোনো ম্যারিড লোকের প্রেমে না পড়ে কখনও। তোর কাছে আমার একটাই চাওয়া।
– কি বলছো মা! উনি তো আমাকে ছবি আঁকায় হেল্প করতে আসেন। উনি তো আমাদেও আরজু ম্যাডামের হাজব্যন্ড। আমি কেন… কিন্তু মা আমার কথা শোনার প্রয়োজন বোধ করেননি। উঠে চলে গেছেন। সেদিনই বুঝে গেছি বয়ফ্রেন্ড হিসাবে জাফর আমার মায়ের কাছে কতটা অনাকাঙ্খিত।

জাফর আসে না অনেক দিন। ফোনও করছে না। সেদিন ক্লাস ছিল না। বাড়িতেই আছি সারাদিন। ভাবলাম একটু খোঁজ নেই। মানুষটার। হাজার হউক শুভাকাক্সক্ষী তো! ফোন দিলাম
– কোথায় তুমি? খোঁজখবর নাই।
– চেষ্টা করছি?
– মানে
– তোমাকে না দেখে কতদিন থাকতে পারি সেই চেষ্টা।
– কি বলছো পাগলের মতো?
– সত্যি তোমাকে না দেখে থাকার প্যাকটিস করছি। কতদিন পারবো জানি না। তবে চেষ্টা সফল হলে আমরা দুজনেই বেঁচে যাব।
-কি সব পাগলামি কথাবার্তা। প্লিজ, ফোন রাখ। ওর কণ্ঠ শুনেই ভিতরে ভিতরে কি যেন হয়ে যায় আমার। দ্রুত ফোন রেখে বাঁচি। আমি কি তবে মানুষটার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছি। নিজেকে মিথ্যে প্রমাণ করতেই যেন আরও বেশি করে কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। অনেক দিন পর নিজের রুম গুছাই। বেশ ময়লা জমে আছে টেবিলটায়। দ্রুত হাবিজাবি জিনিসপত্র সরিয়ে নিয়ে ন্যাপকিন আর গ্লাস ক্লিানার দিয়ে মুছে নেই। খাটের চাদর পাল্টাই। এরপর ফুরফুরে মনে ইজেল নিয়ে বসি। নানা রঙের সান্নিধ্যে নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করি।
বিকেলে মা ফিরলেন একগাদা খাবার দাবার নিয়ে। আজ আর রান্নার ঝামেলা নেই। মা এলেন আমার ঘরে- কিরে সারাদিন কি করলি, কিছু এঁকেছিস?
আসলে আজ আর কিছুই করা হয়নি আমার। রং তুলি নিয়ে বসলেই কি, আঁকা হয়নি কিছুই। আসলে সারাদিন শুধু জাফরকে নিয়ে ভেবেছি আজ। ও টেলিফোনে কীসব বললো-এর আগে তো কখনও এমন করে বলেনি। আমাকে যে ওর ভালো লাগে এটা টের পেতাম। কিন্তু সেটা যে এতটা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে গেছে তা বুঝতে পারিনি। এখন তাহলে কি করা উচিত আমার? জাফরের সঙ্গে রিলেশন পুরোপুরি শেষ করে দিব? সেটা কি আদৌ সম্ভব? আরজু ম্যাডাম জানলে কি ভাববেন?
আমাকে নীরব দেখে মা বললেন-কিরে কী ভাবছিস? সারাদিন কি করলি বাসায় থেকে? গোসলটাও তো করিসনি। এখন চল খেয়ে নেই। তোর সাথে এক সাথে খাব বলেই তো এগুলো এত দূর থেকে বয়ে আনলাম।
– আম্মু তুমি খাও। আমি পাঁচ মিনিটে ফ্রেশ হয়ে আসছি।
খেতে খেতে মা কথাটা বললেন। একটা নামি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে আর্ট টিচার নেবে। বেতন ভালো আমি চাইলে সেখানে জব নিতে পারি। আমি খানিকটা আমতা আমতা করতেই মা সব তুড়ি মেওে উড়িয়ে দিলেন।
– তোর তো আর প্রতিদিন ক্লাস হয় না এখন। জবটা নিয়ে নে। বাচ্চাদের আর্ট শেখাবি সময়টাও কাটলো-টাকাও পেলি। তোর ভালো লাগবে দেখিস। পরীক্ষা টরীক্ষা কিছু দেয়া লাগবে না তুই গেলেই নিয়ে নিবে।
মা এমনভাবে কথাটা পারলেন যে এখানে আমার না বলার জায়গা নেই। বুঝলাম আমাকে এখানে জয়েন করতে হবে। মা আমাকে কাজে ব্যস্ত রাখতে চাইছেন। স্কুলের চাকরিটা ভালোই লাগছে। ছোট ছোট কিউট বাচ্চাদের কিছু আঁকাআঁকি শেখানো যা বলতে গেলে তেমন কাজই না। এর ওপর প্রিন্সিপ্যাল ম্যাডামও বেশ ভালো। সকালের সময়টা ভালো কাটছে আমার। এর মধ্যে একদিন জাফরের ফোন
– দেখা করতে পারবে?
– এখন তো পারবো না।
– তুমি ব্যস্ত?
আসলে আমার স্কুলের চাকরির খবর ও জানে না। আমি ওকে বললাম।
– তোমার স্কুল ছুটি হবে কয়টায়।
– দুপুর ২টায়।
– তোমার স্কুল থেকে তো ধানমন্ডি লেক অনেক কাছে। ছুটির পর তাহলে চলে আস। এর আগে লেকে যাওয়া হয়নি আমার। তারওপর দুপুর রোদে কেউ কি লেকে ঘুরতে যায়? কিন্তু জাফরকে কোনও কিছু বুঝিয়ে বলার উপায় আছে! সে তো অর্ডার দিয়েই ফোন রেখে দিয়েছে।
দুপুরে স্কুল থেকে বেরিয়ে দেখি জাফর দাঁড়িয়ে। রাস্তা পাড় হয়ে কাছে যেতেই হাঁটা শুরু করলো।
-আরে যাচ্ছ কোথায়? দাঁড়াও।
-কথা আছে। জরুরি কথা। লেকে চল। আমাকে নিয়ে সোজা ধানমন্ডির লেকে। এই সময় লেকের আশপাশটা নির্জনই থাকে। আমরা বসলাম জলের ধার ঘেষে সিঁড়িতে। ও কোনো ভূমিকা না করেই বললো।
– আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।
– কি?
– তোমাকে ছাড়া থাকা। আমি এই কয়দিন ধরে অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমার পক্ষে তোমাকে ছাড়া বেঁচে থাকা অসম্ভব।
– কি বলছো এসব?
– সত্যি বলছি। আমি তোমাকে নিজের করে পেতে চাই। এজন্য যা যা প্রয়োজন সব করতে রাজি আছি।
– তোমার না বউ আছে, মেয়ে আছে।
-সেসব নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না দরকার হলে আরজুকে আমি ডির্ভোস দিব।
এই বলে ও আমাকে জড়িয়ে ধরলে।া ঠোট রাখলো আমার ঠোটে। আমি চমকে উঠলাম। প্রথম পুরুষের স্পর্শ। মনে হেেচ্ছ গোটা শরীরে ভূকম্পন হচ্ছে। আমি আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে আসছি। ওর আগ্রাসী আলিঙ্গন আমাকে যেন এক রহস্যময় জগতে নিয়ে যাচ্ছে, যে জগত সম্পর্কে আমার কোনও ধারণাই নেই। একটা লতার মতো আমি ওর বুকে নুয়ে পড়ছিলাম। কিন্তু আমার সব হৃদপি- আমাকে সজাগ করে তুললো- ‘এই মেয়ে কি করছিস তুই। পালা পালা। পালিয়ে যা এই মায়ার জাল থেকে।’ আমি এক জটকায় জাফরকে সরিয়ে দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে এলাম। কিন্তু নিজের কাছে থেকে কীভাবে পালাই। কীভাবে মুছে ফেলি ওর স্পর্শ। গোটা শরীরে লেপে আছে ওর বুনো আদর। এর ভিতর আমার সঙ্গে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেছে সে। আমি যোগাযোগের সব রাস্তা নিষ্ঠুরভাবে বন্ধ করে দিয়েছি। ফেসবুকে ও মোবাইলে ব্লক করলাম ওকে। স্কুলেও ছুটি নিলাম অসুস্থতার দোহাই দিয়ে। যাতে স্কুলে এসে দেখা করতে না পারে।  কিন্তু নিজের মনকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করি! আমি তো জাফরের কাছ থেকে দূরে যেতে গিয়ে যেন আরও বেশি করে জড়িয়ে যাচ্ছি ওর সঙ্গে। তিন দিন পর লতার ফোন রিসিভ করলাম। লতার ফোন থেকে কল করেছে জাফর। ওর কণ্ঠ শুনলাম। যেন গোটা শরীরে শান্তির প্রবাহ বয়ে গেল। তাই আর ফেরাতে পারলাম না-
– লক্ষ্মীটি কেন এভাবে আমাকে কষ্ট দিচ্ছ। নিজেকেও তো কষ্ট দিচ্ছ? কেন করছো এসব ছেলেমানুষী? আমাদের ভালোবাসা অকৃত্রিম, অমর। কেউ তোমাকে আমার ভালোবাসা থেকে ফেরাতে পারবে না। এমনকি তুমি ও না।
আমি দ্বিধায় পড়ে গেলাম। তবে কি জাফরই আমার কাক্সিক্ষত পুরুষ যার অপেক্ষায় ছিলাম এতদিন ধরে? নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া শেষে মায়ের মুখোমুখি হলাম
– আম্মা, আমি বিয়ে করবো।
– কাকে? জাফরকে?
 মা রাগের সাথে বললেন- যেমন বাপ তেমন মেয়ে। বংশের ধারা কীভাবে যাবে? আমি যে ভয়টা পেয়েছিলাম সেটাই হলো।
– এখানে আব্বুকে কেন টানছো তুমি? যা করার আমি করেছি। আমাকে বলো।
– তোর আব্বু কি করেছিলো জানিস? জাফরের মতোই বউ বাচ্চা রেখে একটা অল্প বয়সী মেয়ের প্রেমে পড়েছিল। আমি তো অনেক চেষ্টা করেছি তোর বাবাকে ফেরাতে, কিন্ত সে ফেরেনি। এমনকি সেই মেয়েটারও কত অনুনয় করেছি আমার সংসারটা বাঁচাতে। কিন্ত ওই পাষানির মন টলেনি। আজ তুই আমার মতোই আরেকটা স্ত্রীর কাছ থেকে তার স্বামীকে কেড়ে নেয়ার পাঁয়তারা করছিস? একটা মেয়েকে বঞ্চিত করতে চলেছিস তার পিতৃস্নেহ থেকে।
আমি থমকে গেলাম। কই মাতো আগে আমাকে এসব বলেনি।
– জানিস জসিমের সাথে আমার সম্পর্ক শেষ হয়েছে কেন? তোর জন্যই।
– আমার জন্য। কী বলছে এসব।
– হ্যাঁ আমাকে রেখে আমার কিশোরী মেয়ের দিকে নজর পড়েছিল বুড়ো ভামটার। এসব নস্টামি আমি টের পেতেই তো আমি ওকে আমার বাড়িতে আসতে নিষেধ করেছিলাম।
– মা, থাম, তুমি এসব কী বলছো?
– কেন থামবো? আমার মেয়েকে একজন শিকার বানাবে আর আমি চেয়ে চেয়ে দেখবো। পুরুষদের একটা রোাগ আছে, বুঝলি? বাঘের মতো তাদের কচি মাংস চাই। যত বুড়ো হতে থাকে-তাদের এই রোগটাও তত বাড়তে থাকে। তোর বাবা, জসিম এমনকি জাফরও এই রোগে আক্রান্ত। এরা অল্প বয়সী মেয়েদের টোপ ফেলে, যেভাবে মাছের জন্য বরশিতে টোপ ফেলা হয়-ঠিক সেভাবে। আজ তোকে নিজের লালসার শিকার বানাতে চাইছে জাফর। তুই একে ভালোবাসা বলছিস, কিন্তু আমি বলিনা। এইসব লোভি পুরুষেরা কখনও কোনও নারীকে ভালোবাসতে পারে না, কেবল ভোগ করে।
মায়ের মুখে এসব কথা শোনার পর সিদ্ধান্ত নিতে একটুও সময় লাগেনি আমার। কেবল একটা ম্যাসেজ দিয়েছিলাম জাফরকে।
– তুমি আমার পুরুষ নও। একজন বিবাহিত পুরুষ। স্ত্রী রেখে যারা অন্য মেয়ের সাথে সম্পর্ক করে তাদের পারর্ভাটেভ পুরুষ বলে। আমি কোনও পারর্ভাটেভ পুরুষের সাথে সম্পর্ক রাখতে চাই না।
এরপর অনেক দিন শহর থেকে দূরে। আমি আর মা ঘুরে বেরিয়েছি সাগর-পাহাড়- আর জঙ্গলে। জাফরের ঘটনা দুটি অসীম বয়সী নারীকে আরো কাছে এনেছে। পরস্পরের প্রতি নির্ভরতা বেড়েছে আমাদের। মা তার প্রেমে পরা, বিয়ে আর বিয়ে ভাঙরা সব গল্প ডিটেইলস বলেছেন আমাকে। কীভাবে বাবার সঙ্গে দেখা, ভালোলাগা থেকে প্রেম। তারপর পরিবারের অমতে গিয়ে একা একা বিয়ে। সংসার চালাতে টিউশনি করা। কেননা দুজন স্টুডেন্টের পক্ষে লেখাপড়ার পাশাপাশি আস্ত একটা সংসার চালানো তো চাট্টিখানি কথা না।
-মা, তোমাদের প্রেম তো মুভিকেও হার মানায়। তোমাকে যে মানুষটা এতো ভালোবাসতো সে কীভাবে ছেড়ে গেল, তাও আবার আরেকটা মেয়ের জন্য?
-ভালোবাসা হলো কাঁচামালের মতো। দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। পৃথিবী আর কোনও জিনিস এত তাড়াতাড়ি পচে না।
এায়ের কথায় যুক্তি আছে। তাই র্তক না কওে মেনে নিলাম।
অনেকদিন পর ক্যাম্পাসে গেছি। ফাইনাল পরীক্ষার রুটিন আনতে। লতার সঙ্গে দেখা। ও আমাকে এক কোণায় টেনে নিয়ে গেল।
– জাফর স্যারের কথা জানিস কিছু?
– ওর কথা আমি কেন জানবো?
– তার তো বউয়ের সাথে ডিভোর্স হয়ে গেছে। এখন বোধহয় একাই থাকে। তোর সাথে দেখা করার জন্য সে কি আকুলতা। আহা বেচারি।
জাফরের ডিভোর্স হয়ে গেছে। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। আমি তো সবকিছু ছেড়েই দিয়েছি। তারপরও ওদের সংসারটা টিকলো না কেন? অনেক দিন পর জাফর পেয়ে বসলো আমাকে। ও এখন কী করছে, কোথায় থাকে? ইউনিভার্সিটির চাকরিটাও ছেড়ে দিয়েছে। এখন তাহলে চলছে কি করে ওর! কয়েক দিন ধরে এসবই ভাবছিলাম আমি। ভিতরে ভিতরে অনুশোচনায় দগ্ধ হচ্ছিলাম। তাহলে কি আমার জন্যই ভেঙে গেলো ওদের ছবির মতো সুন্দর সংসারটা।  জাফরের সঙ্গে দেখা করার জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়েছিলাম। মন চাইছলো বলেই হয়তো দেখাটা হয়ে গেলো দ্রুত।
এশিয়ান চিত্রকলা প্রদর্শনী হচ্ছে শিল্পকলাতে।  সেদিন বিকেলে গেলাম সেখানে, একাই। ঘুরে ঘুরে ছবি দেখছি। হঠাৎ যেন ফ্রিজ হয়ে গেলাম। ছোটবেলায় পানি বরফ মেলার মতো কে যেন আমাকে ছুড়ে বলেছে বরফ। আমিও বরফ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। জাফরই এগিয়ে এলো
– তুমি তো আগের মতোই আছ। একটুও বদলাওনি। চলো কোথাও বসে গলা ভেজানো যাক।
আমি নিঃশব্দে ওর পাশাপাশি হাঁটছি। বুকের মধ্যে ঝড় বয়ে চলেছে। আমরা শিল্পকলা ছাড়িয়ে আরেকটু সামনে ‘ভোজ’ রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম। মুখোমুখি বসে আছি দু’জন। মাঝখানে দুটো চায়ের কাপ কেউই তা স্পর্শ করছিনা। আগের মতোই জাফর বললো-
– অনেক দিন পর দেখছি তোমাকে, কী যে ভাল্লাগছে!
– কী করে হলো এত কিছু!
– আরজুর কথা বলছো? আরজু ওর ভালোবাসার মানুষ খুঁজে পেয়েছে। আমি কেন ওদের মাঝে কাঁটা হয়ে থাকবো? দিলাম ছেড়ে।
– আমি হাফ ছেড়ে বাচলাম। যাক তাহলে ওদের বিয়ে ভাঙার কারণটা আমি নই।
– তারপর
– তারপর আর কি? আরজু কল্লোলকে বিয়ে করেছে।
– কোন কল্লোল, আমাদের ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্ট?
– হুম। পড়াতে পড়াতেই সম্পর্ক। এখন ওরা ভালো আছে। খুব ভালো আছে।
– মেয়ে কোথায়?
– আরজুর কাছে। আমার কাছে রেখে কি করবো। চাল নেই চুলা নেই।
– চাকরি ছাড়লেন কেন?
– একঘেয়ে লাগছিলো। এত রুটিন মেনে চলতে ভাল্লাগছিলোনা। নিজেকে কেমন চাকর চাকর মনে হতো। তাছাড়া আরজু চলে যাওয়ার পর সব কেমন এলোমেলো হয়ে গেছে। আসলে ও যে আমার এতখানি জুড়ে আছে…
– জান, আমি যে আরজুকে এতটা ভালোবাসি আগে বুঝিনি। ও আমাকে ছেড়ে যাওয়ার পর সত্যিটা উপলব্ধি করার পর নিজেই আশ্চার্য হয়ে গেছি। আরজু যদি এভাবে আমাকে একা করে না যেতো তাহলে হয়তো সারাজীবন সত্যটা অজানাই থেকে যেত।
জাফর বলেই চলেছে
– সেদিন তুমি ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলে। তুমি আমাকে খুব বাঁচিয়ে দিয়েছ। সেদিন যদি আমরা ঝোঁকের মাথায় কিছু করে বসতাম তাহলে কত বড় ভুল হতো বলো তো! তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।
আমার নিজের ওপর খুব রাগ হচ্ছে। একদিন এই মানুষটাকে কাছে পাওয়ার জন্যই না পাগল হয়ে উঠেছিলাম আমি। মায়ের সঙ্গে কত ঝগড়া করেছি! আচ্ছা আজ যদি ও আমার সাথে থাকতো তাহলে কি করতো সে? এখন আমিই বা কি করতাম?
আমি কথা ঘোরানোর জন্য বললাম-এখন তাহলে কি নিয়ে আছেন? আঁকাআঁকি নিয়ে?
-হুম। স¦াধীনভাবে ছবি আঁকছি। এই একজিবিশনেও আমার একটা ছবি আছে। এই বিশাল আমার দুটো ছবি আছে। ইতিমধ্যে একটা বিক্রি হয়ে গেছে।
– তোমার আঁকাআঁকির কী খবর?
– সব বন্ধ। ঘুরাঘুরির মধ্যে কি আর আঁকা যায়?
-আরে কি বলো! অনেক আর্টিস্ট তো ছবি আঁকার জন্যই কত যায়গায় ঘুরতে যায়।
-আমি তো আর সেই উদ্দেশে যাইনি। কেবল ঘুরতেই গিয়েছিলাম।
– খুব ঘুরলে কদিন না? আমার সঙ্গে ঘুরতে যাবে? তোমাকে পাশে নিয়ে সমুদ্র দেখার শখ আমার, অনেক দিন ধরে। যাবে আমার সাথে?
ও টেবিলের ওপর থাকা আমার বাম হাতটা মুঠোবদ্ধ করে। লোকটা বলে কি! একটু আগেই না আরজুর জন্য ভালোবাসা উথলে উঠেছিলো। আর এখন আমার সাথে সমুদ্রে যেতে চায়! আশ্চর্য একজন একসঙ্গে কতজনকে ভালোবাসতে পারে? আমি আস্তে আস্তে হাতটা ওর মুঠো থেকে ছাড়িয়ে নিতে নিতে বলি।
– সামনে পরীক্ষা। আপাতত পরীক্ষা ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারছি না।
হায় কী বিচিত্র এই জীবন! যে মানুষটাকে জড়িয়ে ধরে জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত নিতে চলেছিলাম-যাকে ভোলার জন্য মাসের পর মাস এখানে সেখানে ঘুরে বেরিয়েছি আজ সে কী বলছে? হায় আমার ভালোবাসা। কথায় কথায় ধোঁয়া ওঠা চা কখন ঠা-া হয়ে গেছে। জাফর নতুন চা অর্ডার করতে চাইলে আমি বাধা দিলাম।
– থাক। আজ আর চা খেতে ইচ্ছা করছে না। তারচে বরং আপনাদের গল্প শুনি।
– আমার আর গল্প কি! একটা বাউ-ুলে মানুষ। মাঝে মধ্যে আরজুর বাসায় যাই। মেয়েকে দেখার জন্য। আসলে ওটা তো একটা ছুতো মাত্র। আমি তো যাই আসলে আরজুর জন্য। জান ও এখন আগের চেয়েও সুন্দর হয়েছে।
– পল্লব কিছু বলে না।
– ও তো সবসময় থাকে না। আমি আর আরজু বসে গল্প করি। আরজু আমাকে বিয়ে করার তাড়া দেয়। আমার মতো ছাগলকে কে বিয়ে করবে বলো তো! কতদিন তোমার কথা জানতে চেয়েছে। কার কাছে কি শুনেছে কে জানে!
আমি দ্রুত উঠে পড়ি।
-রাত হয়ে যাচ্ছে। মা খুব চিন্তা করবে। বয়স হয়েছে না।
নিচে নেমে রিকশা নেই। ও আসে পিছন পিছন। ভিখারির মতো কাতর কণ্ঠে বলে-আমাদের আবার কবে দেখা হচ্ছে বিনু? অবশ্য যদি তুমি চাও।  আমি কোনও উত্তর দেই না। নিঃশব্দে হেসে রিকশায় উঠি। ঠিক তখনই ও বললো-
– সেদিনের লেকের ঘটনার জন্য আমি লজ্জিত। বিশ^াস করো সত্যি বলছি। আমরা তো ভালো বন্ধু ছিলাম, তাই না! জীবনে বন্ধুত্বেও মূল্য কি কম, বলো?
লোকটা আরও কি সব বলতে থাকে। আমি না শোনার ভান করে রিকশাওয়ালাকে বলি- মামা ওয়ারি।
ব্যস্ত রাজপথ বেয়ে ছুটে চলেছে রিকশা। সন্ধ্যায় কুলায় ফেরা পাখিদের মতো আমিও ফিরছি ঘরে। চারপাশে চোখ ধাধানো আলো। রাতের অন্ধকারকে পরাজিত করতে কত না আয়োজন। তাতেও কি অন্ধকার পুরোপুরি কাটে! আলো আর অন্ধকার সে সবসময় হাত ধরাধরি করেই চলে। সঠিক পথটা খুঁজে বের করা তো পথিকেরই নিজস্ব দায়িত্ব। ধূপছায়া সন্ধ্যায় হঠাৎ করেই খুব নরম একটা বাতাস শিষ দিয়ে যায়। মিষ্টি বাতাস যেন আলতো করে জানান দিয়ে গেল-বসন্ত আসছে। অনেকদিন পর ভালো লাগছে, বেশ ভালো লাগছে।

মাহমুদা আকতার: কথাসাহিত্যিক, সাংবাদিক ও অনূবাদক। প্রকাশিত গ্রন্থ পাঁচটি।

ওমেন্স নিউজ/