স্ত্রীর মর্যাদার দাবিতে স্বামীর বাড়িতে অনশন

হাসানুজ্জামান হাসান, লালমনিরহাট

লালমনিরহাটের আদিতমারীর নামুড়িতে স্ত্রীর মর্যাদার দাবিতে স্বামীর বাড়িতে অনশন শুরু করেছেন ভার্সিটিতে ভর্তি-ইচ্ছুক এক শিক্ষার্থী। শুক্রবার (১ এপ্রিল) দুপুর থেকে নামুড়ি মদনপুর এলাকায় স্বামী আশিকুর জামান (২২) এর বাড়িতে অনশন শুরু করেন রিপা আক্তার (১৮) নামের ওই শিক্ষার্থী।

আশিকুর জামান নামুড়ি মদনপুর এলাকার আমির হোসেনের ছেলে।  রিপা আক্তার-ও ওই একই এলাকার বাসিন্দা আবুল কালামের মেয়ে।

এলাকাবাসী ও মেয়ের পরিবার সূত্রে জানা যায়, একই পাড়ার বাসিন্দা হওয়ায় তাদের দুজনের মধ্যে পরিচয় ছিলো। পড়াশুনার সুবাদে রংপুরে বসবাস করতে গিয়ে দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এক পর্যায়ে গত বছরের ডিসেম্বরে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় দুজনের সম্মতিতে লালমনিরহাটের নোটারি পাবলিক কার্যালয়ে এভিডেভিট করে তারা বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন। পরে রংপুরে বাসা ভাড়া নিয়ে সংসার শুরু করেন। পরিবারকে লুকিয়ে ছেলে রংপুরে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ করে ও মেয়ে নার্সিংয়ের ভর্তি কোচিংয়ের কথা বলে একসাথে বসবাস করতেন।

বিষয়টি ছেলের পরিবার বুঝতে পেরে চাপ দিয়ে কৌশলে ছেলেকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে আসেন এবং মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এক সপ্তাহ থেকে স্বামীকে খুঁজে না পেয়ে অবশেষে ছেলের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে স্বামীর খোঁজ করেন রিপা আক্তার। কিন্তু এতে তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে ছেলেকে অন্যত্র পাঠিয়ে দেন। স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমেও স্বামীর খোঁজ করতে না পেরে অবশেষে শুক্রবার ছেলের বাড়িতে ঢুকে অনশন শুরু করেন রিপা আক্তার।

এ বিষয়ে রিপা আক্তার বলেন, ‘আমরা দুজনে প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে বিয়ে করে সংসার করতেছিলাম। আমার শ্বশুর বাড়ির লোকজন আমার স্বামীকে কৌশলে ডেকে এনে তাকে লুকিয়ে রেখেছে। আমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমি আমার স্বামীকে ফিরে পেতে অনশনে বসেছি। এখানে আসার পর বাড়িতে ঢুকতে আমাকে বাধা দেওয়া হলেও জোর করে আমি বাড়িতে ঢুকেছি। আমি আমার অধিকার পেতে চাই।’

মেয়ের মা রাশেনুর খাতুন বলেন, ‘আমি ও আমার স্বামী ঢাকায় গার্মেন্টস করে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাই। কষ্ট করে সংসার করি। আমার মেয়ে চাচীসহ থাকতো। মেয়ে গোপনে বিয়ে করেছে শুনে ঢাকা থেকে এসেছি সমাধান করতে। তিনদিন ধরে ছেলের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমাধান করতে ব্যর্থ হওয়ায় মেয়েকেও আটকাতে পারিনি। সে তার শ্বশুরবাড়ি চলে গেছে।’

এ বিষয়ে ওই ছেলের নম্বরে ফোন দেওয়া হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। তার বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।

ছেলের বাবা আমির হোসেন মোবাইলে বলেন, ‘আমি বাইরে আছি। আপনার সঙ্গে পরে কথা বলবো।’

পলাশী ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুর রশীদ বলেন, ‘আমি ঘটনা শুনে এসে দুই পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। মেয়েকে নিরাপদ স্থানে রেখে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি। মেয়েকে তার স্বামীর অধিকার ফিরিয়ে দেয়া হবে।’

বিষয়টি নিয়ে পলাশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলাউল ইসলাম ফাতেমী পাভেল বলেন, ‘ঘটনাটি শুনে স্থানীয় মেম্বারকে সেখানে পাঠিয়েছি। যেহেতু মেয়েটি বাড়ির বাইরে তাই নিরাপদ জায়গায় রেখে দুই পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি মিমাংসা করা হবে।’

আদিতমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোকতারুল ইসলাম জানান, ঘটনার প্রেক্ষিতে পুলিশ সেখানে গিয়েছিলো। গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি দেখা হচ্ছে।

ওমেন্স নিউজ ডেস্ক/