করোনা হলে কীভাবে থাকবেন আইসোলেশনে?

প্রতীকী ছবি

বিশ্বজুড়ে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের এখনও কোনও প্রতিষোধক বা ওষুধ বের হয়নি। তবে কিছু সাবধানতা করলে এই রোগ থেকে সম্পূর্ণ সেরে ওঠা সম্ভব। এর একটি হচ্ছে আইসোলেশন বা নিজেকে পরিবার ও সমাজ থেকে আলাদা করে সম্পূর্ণ একাকি দিন কাটানো। করোনা সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিলে বা এতে আক্রান্ত হয়েছেন এমন সন্দেহ হলে প্রথমেই আক্রান্ত ব্যক্তিকে আশপাশের লোকজন থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে হবে। এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞ ও ডাক্তাররা।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রথম লক্ষণ হলো জ্বর এবং শুকনো কাশি। আপনার এরকম লক্ষণ দেখা দিলেই সেল্ফ-আইসোলেশনে' চলে যান। অর্থাৎ নিজেকে অন্যদের সংস্পর্শ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করে ফেলুন।

এর উদ্দেশ্য হলো যাতে আপনার বাসা, পরিবার, কর্মস্থল, বা সামাজিক পরিমন্ডলে অন্য যে মানুষেরা আছেন – তাদের মধ্যে ভাইরাস ছড়াতে না পারে।

নিজেকে কীভাবে করবেন সেল্ফ আইসোলেন?

ঘরে থাকুন

আইসোলেশনের প্রথম শর্ত হচ্ছে আপনাকে ২৪ ঘণ্টাই ঘরে থাকতে হবে। কর্মস্থল, মার্কেট, বাজারঘাটসহ যে কোন ধরনের জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে। কোনও পাবলিক ট্রান্সপোর্ট – অর্থাৎ বাস, ট্রেন, ট্রাম, ট্যাক্সি বা রিকশা যাই হোক না কেন, ব্যবহার করা যাবে না। অর্থাৎ নিজেকে পুরোপুরি ঘরবন্দি করে ফেলতে হবে।

কেমন ঘরে থাকবেন?

এমন একটা ঘরে থাকুন যাতে জানালা আছে, ভালোভাবে বাতাস চলাচল করতে পারে। বাসার অন্য লোকজন যেন ওই ঘরে প্রবেশ করতে না পারে সেটি নিশ্চিত করুন। একই সঙ্গে আপনিও কারও সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না। আপনার যদি বাজার-হাট করতে হয়, বা কোন ওষুধ বা অন্য কিছু কিনতে হয় – তাহলে অন্য কারো সাহায্য নিন। আপনার বন্ধু, পরিবারের কোন সদস্য বা ডেলিভারিম্যান এটা করতে পারে।

যারা আপনার জন্য খাবার বা জিনিসপত্র নিয়ে আসবে, তাদের বলুন আপনার ঘরের দরজার বাইরে সেগুলো রেখে যেতে। পরে আপনি তা তুলে নিবেন।

বাড়ির অন্যদের কী করতে হবে?

ধরুন, আপনি এমন একটি বাড়িতে আছেন যেখানে একটি ‘কমন রান্নাঘর’ আছে যা সবাই ব্যবহার করেন।

এ ক্ষেত্রে যার করোনাভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিয়েছে তার এমন সময় সেই রান্নাঘরটি ব্যবহার করা উচিত যখন অন্য কেউ সেখানে নেই। তার উচিত হবে রান্নাঘর থেকে খাবার নিয়ে নিজের ঘরে গিয়ে খাওয়া।

ঘরের মেঝে, টেবিল চেয়ারের উপরিভাগ – এমন 'সারফেস'গুলো প্রতিদিন তরল সাবান বা অন্য কোনো ক্লিনিং প্রোডাক্ট দিয়ে পরিষ্কার করুন।

যদি নিজেকে সম্পূর্ণ আলাদা করা সম্ভব না হয় তাহলে কী করবেন?

যদি এমন হয় যে আপনি নিজেকে পরিবারের অন্য সদস্য বা ফ্ল্যাটের অন্য বাসিন্দাদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করতে পারছেন না, সে ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ হলো একে অপরের সংস্পর্শে আসা যতটা সম্ভব সীমিত করুন।

যদি সম্ভব হয়, বাসার অন্য লোকদের থেকে কমপক্ষে ২ মিটার বা ৬ ফুট দূরে থাকুন। ঘুমানোর সময় একা ঘুমান।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ যাদের জন্য বেশি বিপজ্জনক হতে পারে – যেমন বয়স্ক মানুষেরা – তাদের থেকে দূরে থাকুন।

বাড়িতে কেউ আইসোলেশনে থাকলে অন্যদের কী করতে হবে?

আইসোলেশনে থাকা কোনও ব্যক্তির সাথে যারা এক বাড়িতে বসবাস করছেন, তাদের জন্য পরামর্শ হলো: তাদের ঘন ঘন হাত ধুতে হবে। হাত ধোয়ার নিয়ম হলো- সাবান ও পানি ব্যবহার করে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুতে হবে। বিশেষ করে সংক্রমিত কারো সংস্পর্শে আসার পর।

কোন কোন জিনিস 'শেয়ার' করা যাবে না

আপনার বাড়িতে কেউ আইসোলেশনে থাকলে তার ব্যবহৃত তোয়ালে, টুথপেস্ট, সাবান, শ্যাম্পু, কন্ডিশনার বা এরকম কোন টয়লেট্রিজ ব্যবহার করা যাবে না। সবচেয়ে ভালো হয় বাড়ির সব সদস্যদের জন্য আলাদা আলাদা এসব সামগ্রির ব্যবস্থা করে নেয়া। তাহলে একজনের সংস্পর্শে থেকে আরেকজনের সংক্রামিত হওয়া অনেকখানি কমে যাবে। প্রচণ্ড রকমের ছোঁয়াচে এই রোগ এভাবেই নিজেকে রক্ষা করতে হবে।

আইসোলেশনে থাকা ব্যক্তির আলাদা একটি বাথরুম ব্যবহার করা উচিৎ। তা সম্ভব না হলে নিয়ম করুন যে যিনি আইসোলেশনে আছে – তিনি বাথরুম ব্যবহার করবেন সবার শেষে, এবং ব্যবহারের পর সম্ভব হলে সেটি ভালোভাবে পরিষ্কার করবেন।

যিনি আইসোলেশনে আছেন তার ফেলা বা সংস্পর্শে আসা সব রকম আবর্জনা একটি বিনব্যাগে ভরে তা আবার আরেকটি ব্যাগে ভরুন।

যদি তার করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিশ্চিত হয় – তাহলে এই আবর্জনা কীভাবে ফেলতে হবে, সে ব্যাপারে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

উইমেন্স নিউজ লাইফস্টাইল ডেস্ক