আফরোজা অদিতির প্রবন্ধ ‘একুশ ও একুশের প্রথম কবিতা’

আফরোজা অদিতি

একুশ ও একুশের প্রথম কবিতা

বাঙালির প্রাণের ভাষা বাংলা। বাংলাতে কথা বলে, বাংলাতে চিঠি লিখে যতোটা আনন্দ বাঙালি হিসেবে পাওয়া যায় ততোটা আনন্দ অন্য কোনো ভাষাতে বাঙালি পায় না; পেতেও পারে না। আমি বাঙালি, বাংলাদেশ আমার দেশ। বাংলা আমার মাতৃভাষা। বাংলাতেই প্রথম  ডেকেছি মা। বাংলাতে মা ডাকের মাঝে যতো মধু আছে আমার বিশ্বাস অতোটা মিষ্টতা কোনো ভাষার মা ডাকের মাঝে নেই বা পাওয়া যাবে না। আমরা বাংলাতে কথা বলি, বলছি, বলতে পারছি, বাংলা আমাদের রাষ্ট্রভাষা হয়েছে কিন্তু এই অর্জন অনেক ত্যাগের বিনিময়ে করেছি আমরা। সকলেরই জানা কীভাবে ভাষাযুদ্ধ হয়েছিল তবুও যেটুকু না বললে নয়। কারণ ভাষাযুদ্ধের কথা না বললে তো একুশের প্রথম কবিতা সৃষ্টির ইতিহাসকে স্মরণ করতে পারবো না। গত শতাব্দিতে ব্রিটিশ শাসনের শিকল ভেঙে আমরা “এপারে তুমি ওপারে আমি” করে পাকিস্তান পেয়েছিলাম অর্থাৎ ১৯৪৭ সালের দেশভাগ হয়েছিল দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে। পূর্ব পাকিস্তান আর পশ্চিম পাকিস্তান এই দুটি প্রদেশ মিলে পাকিস্তান গঠিত হয়েছিল কিন্তু এই দুটি প্রদেশের মাঝখানে ছিল ভারত। এবং দুই প্রদেশের (পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান) ভাষারও ছিল ভিন্নতা। সে সময় দেশভাগের ফলে পূর্ব বাংলার বাংলা ভাষাভাষী জনগণ পাকিস্তানের অংশ হয়ে যায় এবং সে সময়ের সরকার বাঙালির ওপরে উর্দু ভাষা চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালাতে শুরু করলে কিছু তরুণ প্রাণ রুখে দাঁড়িয়েছিল। আওয়াজ তুলেছিল শুধু উর্দু নয়, বাংলা হবে রাষ্ট্রভাষা। আমরা বাঙালি বাংলায় কথা বলতে চাই। সে সময়ের হিসেবে পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক ছিল বাঙালি, যারা মোট নাগরিকের ছিল ৫৪%। যা হোক, সে সময়ে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রতিবাদে সোচ্চার হলে ১৪৪ ধারা ঘোষণা করে তদানীন্তন সরকার। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি বাঙালি ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে মিছিল করে। পুলিশ কিছু ছাত্রকে গ্রেফতার করায় বিক্ষুব্ধ হয়ে পূর্ব বাংলা গণপরিষদের সামনে জমায়েত হয় এবং প্রস্তাব উত্থাপনের দাবি জানায়। এক পর্যায়ে ছাত্রদের একটি দল ভেতরে ঢুকতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। পুলিশের বাধার মুখে ছাত্ররা মিছিল বের করলে মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণ শুরু হয় এবং রফিক,সালাম, বরকত শফিউর,জব্বার পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। এই হত্যাকাণ্ডের খবর ছড়িয়ে পড়ে ঢাকা থেকে সারা দেশে।  

যখন ঢাকাতে চলছে রক্তের হোলি, তখন চট্টগ্রামে একুশের প্রথম কবিতা লেখা হয়। কবিতাটি লিখেছিলেন মাহবুব উল আলম চৌধুরী। তিনি ছিলেন চট্টগ্রামে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক। সে সময় কবি অসুস্থ থাকায়  কবিতাটি তিনি বলেছিলেন আর তার পরিচর্যাকারী ননী ধর লিখেছিলেন। হাতের লেখায় ১৭ পৃষ্ঠা ছিল। কবিতাটির নাম “কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবী নিয়ে এসেছি”। বড়ো এই কবিতাটি আন্দরকিল্লার কোহিনুর প্রেস থেকে ছাপা হয়েছিল এবং একুশের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আয়োজিত সভায় কবিতাটি পড়াও  হয়েছিল। সরকার কবিতাটি ছাপা হওয়ার পরপরই নিষিদ্ধ করেছিল এবং কবির নামেও হুলিয়া জারি করেছিল তদানিন্তন পাকিস্তান সরকার। দীর্ঘদিন কবিতাটি লুকিয়ে রাখা হয়েছিল কবির বাড়িতে এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় তার (কবি’র) বাড়িতে পাকি-সৈন্যরা আগুন দিলে বাড়ি এবং অন্যান্য আসবাবের সঙ্গে পুড়ে যায় কবিতাটি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর উদ্ধার করা হয় কবিতাটি। “কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি” কবিতাটির কিছু অংশ :
“এখনে যারা প্রাণ দিয়েছে/রমনার উর্ধ্বমুখী কৃষ্ণচূড়ার তলায়/ যেখানে আগুনের ফুলকির মতো/ এখানে ওখানে জ্বলছে অসংখ্য রক্তের ছাপ/ সেখানে আমি কাঁদতে আসিনি।/………আমার হাজার বছরের ঐতিহ্যে লালিত/ যে ভাষায় আমি মাকে সম্বোধনে অভ্যস্ত/ সেই ভাষা ও স্বদেশের নামে/এখানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্মুক্ত প্রাঙ্গনে/ আমি তাদের ফাঁসির দাবী নিয়ে এসেছি/ যারা আমার অসংখ্য ভাইবোনকে/ নির্বিচারে হত্যা করেছে।/
ওরা চল্লিশজন কিংবা আরো বেশি/ যারা প্রাণ দিয়েছে ওখানে/ রমনার রৌদ্রদগ্ধ কৃষ্ণচূড়া গাছের তলায়/ ভাষার জন্য, মাতৃভাষার জন্য বাংলার জন্য।/ যারা প্রাণ দিয়েছে ওখানে/একটি দেশের মহান সংস্কৃতির মর্যাদার জন্য/ আলাওলের ঐতিহ্য/ কায়কোবাদ, রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য ও কবিতার জন্য/(যারা প্রাণ দিয়েছে ওখানে/ পলাশপুরের মকবুল আহমদের/ পুঁথির জন্য? রমেশ শীলের গাথার জন্য,/ জসীমউদ্দীনের ‘সোজন বাদিয়ার ঘাটের’ জন্য।)/ যারা প্রাণ দিয়েছে/ ভাটিয়ালি, বাউল, কীর্তন, গজল নজরুলের “খাঁটি সোনার চেয়ে খাঁটি/ আমার দেশের মাটি।”/ এ দুটি লাইনের জন্য/ দেশের মাটির জন্য,/ রমনার মাঠের সেই মাটিতে/ কৃষ্ণচূড়ার অসংখ্য ঝরা পাপড়ির মতো / চল্লিটি তাজা প্রাণ আর/ অঙ্কুরিত বীজের খোসার মধ্যে/ আমি দেখতে পাচ্ছি তাদের অসংখ্য বুকের রক্ত।/…….আমরা সেখানে কাঁদতে আসিনি।/……/ যারা গুলি ভরতি রাইফেল নিয়ে এসেছিল ওখানে/যারা এসেছিল নির্দয়ভাবে হত্যা করার আদেশ নিয়ে/ আমরা তাদের কাছে / ভাষার জন্য আবেদন জানাতেও আসিনি আজ।/ আমরা এসেছি খুনি জালিমের ফাঁসির দাবি নিয়ে।…..।”-

এটি একুশের প্রথম কবিতা, আমাদের বাংলা ভাষার কবিতা, আমাদের প্রাণের কবিতা। এই কবিতার যিনি সৃষ্টি করেছেন সেই কবি, তার জন্ম ৭ নভেম্বর, ১৯২৭ এবং মৃত্যু ২৩ ডিসেম্বর, ২০০৭। তিনি ছিলেন ভাষাসৈনিক এবং সাংবাদিক। জন্মস্থান চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার গহিরা আসাদ চৌধুরী বাড়ি।  পিতার নাম আহমদুর রহমান চৌধুরী এবং মাতার নাম রওশন আরা বেগম। ১৯৪৭ সালে মাহবুব উল আলম চৌধুরী চট্টগ্রাম ছাত্র কংগ্রেসে যোগ দেন এবং বিট্রিশ বিরোধী ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশ নেন। তিনি নাচ, গান, নাটক, আবৃত্তি সবখানেই ছিলেন উদ্যোক্তা ও সংগঠক। তিনি গান লিখেছেন এবং গেয়েছেনও। তিনি মাসিক সীমান্ত (১৯৪৭-১৯৫২) এবং দৈনিক স্বাধীনতা (১৯৭২-১৯৮২) পত্রিকা সম্মাদনা করেছেন। ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। ঢাকাতে ছাত্রদের ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনার খবর পেয়েই তিনি “কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবী নিয়ে এসেছি” কবিতাটি রচনা করেছিলেন বলেই কবিতাটি ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রচিত প্রথম কবিতা হিসেবে স্বীকৃত।

আমাদের মুখের ভাষা, বাংলা ভাষা; এই বাংলার জন্য অনেক রক্ত ঝরেছিল। আকাশ-বাতাস ভরেছিল যেমন হাহাকারে তেমনি স্লোগানে স্লোগানে  মুখর হয়েছিল ছাত্র-জনতা। বাংলা ভাষার জন্য যতোটা রক্ত ঝরেছিল ততোটা রক্ত আর কোনো ভাষার জন্য ঝরেছে কিনা জানা নেই! যতোটুকু জানি আর কোনো ভাষার জন্য রক্তে রাঙা হয়নি পৃথিবীর মাটি, কাঁদেনি প্রকৃতি। বাঙালি বীর ভাষাসৈনিকগণ তাঁদের বুকের রক্ত দিয়ে বাংলাকে রঙিন করে গেছে। যেমন বসন্ত রঙিন করে পলাশ কৃষ্ণচূড়া, রঙিন করে প্রকৃতিকে তেমনি বুকের রক্তে রঙিন করেছিল ভাষাসৈনিকেরা। ওরা বাংলাকে বসন্তের রঙে রাঙিয়ে দিয়ে গেছে। তাই তো ফাল্গুন এলেই “আমি আমার আমিকে এই বাংলায় খুঁজে পাই”।  একথা সত্য যে, এই ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই আমরা আনতে পেরেছি স্বাধীনতা। আমরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছি। আমাদের স্বাধীনতা আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। বাংলা আমার ভাষা, বাংলা আমার আশা। সেই জন্যই তো “আমি একবার দেখি, বারবার দেখি এই বাংলার মুখ”। আমার স্বাধীন বাংলাদেশ, আমার স্বাধীন বাংলা ভাষা। এই ভাষাতেই আমি প্রথম কথা বলতে শিখেছি, ডেকেছি আমার মাকে। 

এখানে আর একটু কথা বলতে চাই, শুধু আমাদের একুশে ফেব্রুয়ারি-ই নয় ১৯৬১ সালের ১৯ মে আসামেও বাংলার ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছিল ১০ জন তরুণ ও ১ জন তরুণী। মোট ১১ জন তরুণ-তরুণী বাংলা ভাষার জন্য আহুতি দিয়েছিল আসামে। ১৯৬১ সালের ১৯ মে ভারতের আসাম রাজ্যের শিলচরে বাংলাকে সরকারি ভাষার মর্যাদা দেওয়ার লক্ষ্যে ১১ জন শহীদ হন। তারা হলেন- ১.কমলা ভট্টাচার্য ২. সুনীল সরকার ৩. সুকোমল পুরকায়স্থ ৪. কুমুদ দাস, ৫. চন্ডীচরণ সূত্রধর ৬. তরণী দেবনাথ ৭. হীতেশ বিশ্বাস ৮. শচীন্দ্র পাল ৯. কানাই নিয়োগী ১০. সত্যেন্দ্রকুমার দেব (সত্যেন্দ্রকুমার দেবের বুলেটবিদ্ধ মরদেহ রেলস্টেশনের পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয় ও ১১.বীরেন্দ্র সূত্রধর (হাসপাতালে মারা যান রাতে)। এই ১১  জন শহীদের মধ্যে একটি মাত্র মেয়ে এই শহীদ কমলা ভট্টাচার্য। বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের মতোই আসামের ভাষা-আন্দোলনও রক্তস্নাত ও ঘটনাবহুল। বাংলা ভাষার জন্য আত্মত্যাগে মহীয়ান এই ১৯ মে একটি ঐতিহাসিক দিন। বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আসামের ভাষাশহীদ ও ভাষা আন্দোলনের ভূমিকা তাই কোনভাবেই খাটো করে দেখার কোনো অবকাশ নেই।  বাঙালি মাথা নত করতে জানে না, সে যে দেশেরই হোক। আমাদের প্রতিজ্ঞা হোক, আমরা ভুল উচ্চারণে বাংলা বলব না, বিদেশি শব্দ মিশ্রনে বাংলা বলব না। আমরা “বাংলার হাতে হাত রেখে স্বপ্নে বাংলা দেখি”-আমরা জাগরণে তো চাই-ই স্বপ্নেও বাংলা চাই।

আমাদের ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিকে ১৯৯৯ সালে “আন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস” হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। ২১ ফেব্রুয়ারি এখন শুধু আমাদের মাতৃভাষা দিবস নয়; প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস” হিসবে পালিত হয়। পাকিস্তান আমলে ১৯৫৪ সালে অনুষ্ঠিত গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় পরবর্তীতে জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে বাংলা ও উর্দু উভয় ভাষাকে পাকিস্তনের রাষ্টভাষা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়।  বর্তমানে তিন দেশের ভাষা বাংলা। বাংলাদেশ, ভারত ও সিয়েরা লিওন। বাংলাদেশকে ডটবাংলা ডোমেইন হিসেবে অনুমোদন দিয়েছে (ওঅঘঅ) (IANA) Internet Assigned Number Athority.

অমর একুশের ৭০ বছরে বাঙালির অর্জন খুব একটা কম নয়! এই অর্জনের মধ্যে আছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা; অমর একুশে গ্রন্থমেলারও হয়েছে ৫০ বছর। বর্তমানে এই মেলা “অমর একুশে বইমেলা” হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশে বইমেলা শুরু হয় ১৯৭২ সালে যখন ইউনে¯েকা ১৯৭২ সালকে ‘আন্তর্জাতিক গ্রন্থবর্ষ’ ঘোষণা করে। সেই সময় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে আন্তর্জাতিক গ্রন্থমেলার আয়োজন করা হয়। সেই থেকেই বাংলা একাডেমিতে বইমেলার সূচনা বলে মনে করা হয়।

১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমির উদ্যোগে জাতীয় সাহিত্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেসময় সাত-আটজন প্রকাশক বই সাজিয়ে বসেন। ১৯৭৫ সালেও নির্দিষ্ট কিছু জায়গাতে বই বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়। তবে পরবর্তী কয়েকবছর তেমনভাবে মেলা না হলেও ১৯৭৯ সালে ৭-২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বইমেলা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলা একাডেমি এবং নামকরণ করা হয় ‘একুশে গ্রন্থমেলা’। ১৯৮১ সালে ‘একুশে গ্রন্থমেলা’র মেয়াদ ২১ দিনের পরিবর্তে কমিয়ে ১৪ দিন এবং ১৯৮২ সালে পুণরায় ২১ দিন বইমেলা চলে। এই বইমেলা  আয়োজনে ১৯৮২ সালে বাংলা একোডেমির সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র এবং বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি। ১৯৮৩ সালে মেলার আয়োজন সম্পন্ন হলেও মেলা হয়নি কারণ তৎকালীন এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে শিক্ষাভবনের সামনে ছাত্রদের বিক্ষোভ মিছিলে ট্রাক উঠিয়ে দিলে দুজন ছাত্র নিহত হয়! তাঁদের স্মরণে সেই বছর বইমেলা করা হয়নি। ১৯৮৪ সালে সাড়ম্বরে বর্তমানের ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’র আয়োজন করা হয়। এবং পূর্বের ‘একুশে গ্রন্থমেলা’র পরিবর্তে  “অমর একুশে গ্রন্থমেলা” নামকরণ কার্যকর করা হয়। সেই ছোট্ট মেলার পরিসর ক্রমশ: বাড়ছে। একাডেমি চত্বর ছাড়িয়ে সোহরাওয়ার্দি উদ্যান পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। ফেব্রুয়ারি এলেই আসে একুশে, একুশের নামে আসে অমর একুশে বইমেলা। একুশে যেমন আমাদের প্রাণের বইমেলাও তেমনি আমাদের অন্তরের। যদিও করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে মেলা তেমন জমছে না তবুও “প্রাণের আবেগ, প্রাণের বাসনা রুধিয়া রাখিতে নারি…”। করোনাভাইরাস আমাদের আবেগ-অনুভূতি গিলে খেয়েছে, খাচ্ছে দস্যুর মতো। যতোই গিলে খাক দস্যুর মতো করোনা আমাদের প্রাণের মেলা, ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ কখনও থেমে যাবে না। চিরঐতিহ্য নিয়ে আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবে। প্রাণের টানে তাই তো এবারেও একুশে বইমেলা শুরু হচ্ছে ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এবং চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি। যদি করোনাভাইরাস অর্থাৎ অমিক্রনের দাপট কমে তবে আশা করা যায় মেলার সময়কাল বাড়বে।
 
তথ্যসূত্র: একুশের প্রবন্ধ ২০০২। বাংলা একাডেমি। ২১.০২.২০১৯ প্রথম আলোসহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও অন্তর্জাল।

আফরোজা অদিতি: কবি, লেখক ও প্রাবন্ধিক। তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৫৫টি। পেয়েছেন একাধিক পুরস্কার যার মধ্যে নন্দিনী সাহিত্য ও পাঠচক্র, কবি কামিনী রায় সাহিত্য পুরস্কার, কবি জীবনানন্দ দাশ সাহিত্য পুরস্কার, জাতীয় সাহিত্য পরিষদ, বাংলা ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র ও বাংলাদেশ নারী লেখক সোসাইটির পুরস্কার উল্লেখযোগ্য।

ওমেন্স নিউজ/