শাহলা আহমেদের কবিতা ‘প্রবাসীর ঈদ’

শাহলা আহমেদ

প্রবাসীর ঈদ

চাঁদরাত থেকেই চলে ঈদের উল্লাস।
খুঁজে ফেরা সরু চাঁদ, দেখা মেলতেই
ওই যে চাঁদ ওই যে চাঁদ!!
ধরা পড়ে চাঁদ, মুচকি হেসে উঠে।
পাড়ায় পাড়ায় পটকা ফুটা
গাছ থেকে মেহেদী পারা।

ঈদ মুবারক! ইদ মুবারক
বার্তা পাঠানো টেলিযোগে।
রোজার মাঝেই ঈদকার্ড বিলি হয়
ডাকপিয়ন / ডাকবাক্সে ফেলে।

বেতার টিভিতে বেজে উঠে
‘রমজানের ওই রোজা শেষে
এলো খুশীর ঈদ’——
গলা ছেড়ে তাল মিলিয়ে গাইতে
শুরু করি
মা গৃহিনীরা রান্নাবান্নার আয়োজনে
ব্যস্ত হয়ে উঠেন।

পোলাও কর্মা জর্দা সেমাই চটপটি
নানান রকম টক মিষ্টি!
সব বাড়িতে একই খাওয়া—

ঈদের জামাকাপড় বের করে
এক ঝলক দেখে নেওয়া।

সকাল সকাল গোছল সেরে
জর্দা সেমাই খেয়ে নামাযে যাওয়া
সারাদিন চলে মেহমানের আনাগোনা।

বেরিয়ে পড়ি নানা,ফুফু. চাচার বাড়ি
বন্ধুবান্ধব আত্মিয়ের বাড়ি!
সেজেগুজে নতুন পোষাকে….!
তিনদিন ধরে চলে হৈ হুল্লোর
হাওয়ায় হাওয়ায় ভেসে বেড়াই
আনন্দ উল্লাসে——
দিন শেষে ঈদি গুনি!
কে কত পেলো এই নিয়ে চলে খুনশুটি!

প্রবাসী আমি কেবলই
টেবিল উপছে পড়া ইফতারী
সেহেরীতেও পরিবারের জমজমাট
আড্ডা, হৈ  হুল্লোর ঈদ পর্ব কেবলই
কল্পনায় ভাসাই….

পরিবারের সবাই সেহরীতে টুকটাক
খেয়ে রোজা নামাষ তারাবী পড়ি।
ইফতারী তে ভাজা পরা আর ঘিয়ে
ভাজা খাওয়ায় যত অনিহা…..
নানান অসুখের ফিরিস্তি নিয়ে বসে।

ভাজাপরা আর মুড়ির ভর্তা ছাড়া কি
রোজা  হয়?
অজুহাত দেই, মাত্র এক মাস !

ঈদের কেনা কাটার ও ধুম নেই,
নতুন থাকলে চালিয়ে নেই।
লাল নীল খামে ঈদ কার্ডের অধীর
অপেক্ষা ও ফুরায় গেল—-

ঈদের দিন পাল্লা দিয়ে ঢাকার সাথে
হরেক রকম রান্না করে টেবিল সাজাই…..!
দু একদিনের ছুটিতেই এদিক সেদিক
করি ঘোরাঘুরি—ঈদ পর্ব শেষ।

স্মৃতির জানালা খুলে বসে থাকি
অজান্তেই জল ভরে আঁখি পাতে
মন ছুটে যায় দেশের লাগি।

শাহলা আহমেদ: কবি ও লেখক। এবারের একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে তার প্রথম কবিতার বই ‘স্বপ্ন বুনন’।

ওমেন্স নিউজ/