বসন্ত বরণ-ভ্যালেন্টাইন ডে’র স্মৃতিকথা

শাহলা আহমেদ

শাহলা আহমেদ

আমার সৌভাগ্য যে ২০২২ সালে দেশে ভ্যালেন্টাইন ডে’ এবং বসন্ত উৎসব বেশ উপভোগ করেছিলাম। বিদেশে পাড়ি দেবার পর যতবারই দেশে গিয়েছি, ফেব্রুয়ারি মাস শুরু হওয়ার আগেই চলে আসা হয়, আর ওই মাসেই নানান চমকপ্রদ উৎসব খুবই জাঁকজমকতার সাথে উদযাপিত হয়ে থাকে। ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবস, বই মেলা, বানিজ্যিক মেলা …আর কত কি!তাছাড়া ওই বছরই আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ স্বপ্ন বুনন’ প্রকাশনার কাজে ব্যস্ততা, বই মেলায় যাওয়ার প্রচন্ড উৎসাহ- ভালো মন্দ মিলিয়ে সময় গুলো দারুণ কেটেছিল। বসন্তের মাতাল হাওয়ায় বেড়িয়ে পড়েছিলাম ভালোবাসার সাগরে! দেশে সব দিবসেই খুব ঘটা করে উদযাপিত হয়ে থাকে- চারিদিকে মানুষের উৎফুল্লতা-পথঘাট জমজমাট।

প্রবাসে (নিইউয়র্ক )ঠিক এর বিপরীত। দোকানে দোকানে গোলাপ সহ নানান ধরণের ফুলের তোড়া সাজিয়ে রাখা হয়। এমনকি রাস্তার পাড়ে ও ফুল বিক্রেতারা বসে পরে, ফুলগুলো চড়া মূল্যে বিক্রি হয়ে থাকে। এখানকার লোকজন কাজের পরে রাতের ডিনারে প্রেয়সী বা স্বামী স্ত্রীর জন্যে ফুল হার্টশেপের নানান রকমের চকলেট, চমৎকার সব কার্ডের সাথে ভালোবাসার নির্দশন …..ঠোঁট জোড়ায় বা কপালে চম্মুন একেঁ দেয়া পরম মমতায়।

বসন্ত এসে গেছে
বসন্তের এ লগন এনেছে রঙিন ফাগুন
ফুলে ফুলে ভরে যায় গাছ গাছালী
গাছের পাতার ফাঁকে ফাঁকে
কালো কোকিল কুহু- কুহু গান ধরে।

সেই দিনের দিনটা ছিল চমৎকার।
লাল হলুদে সাজ সাজ রব
ফাগুনে বসন্তে মাতাল…..মাথায় ফুলের টোপর নারী শিশু হলুদ বেশভূষায় উচ্ছাস উচ্ছলে পড়া হলদি পরীরা ছুটে ছুটে বেড়াচ্ছে….হাতিরঝিলে রঙিন ফোয়ারা নানান রঙে ঝলকে উঠে….ছোট ছোট নৌ বিহার… কোথাও দলবেঁধে কোথাও যুগলবন্দী সেলফি তুলতে ব্যস্ত, পুরো রাস্তা….ফুটপাত জুরে আনন্দ উৎসবে মেতে উঠেছে।রাস্তায় প্রচন্ড ট্রাফিক জ্যাম,গাড়ী চালকদের পুরো হিমশিম খাওয়ার অবস্থা। সন্ধ্যার পর হাজারে হাজারে লোকজনে উপছে পড়ছে সারা শহর জুড়ে……ভ্যালেন্টাইন ডে’ উদযাপনে। কিশোরী যুবতী মহিলারা এবার টকটকে লাল শাড়ি জামা, খোঁপায় বেনীতে লাল গোলাপের সাজে….বেশ মজাই লাগছিল দেখতে।
গাড়িগুলো পিপীলিকার মতন এগুচ্ছে। আমাদের প্রচন্ড ক্ষিধে পেয়েছিল। খুঁজে ফিরছিলাম যে কোন একটা রেষ্টুরেন্টে খাওয়া কিন্তু কোন উপায় নেই, প্রায় রেস্টুরেন্টের দরজার বাইরে লেখা স্যরি ইটস্ ফুল!
ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ একটা পেয়ে গেলাম, গেটের কাছে গার্ড, সুন্দর করে অভ্যর্থনা জানালো আমাদের। ঢুকতেই মৌ মৌ গন্ধে ক্ষুধার্ত পেট মোচর দিয়ে উঠলো….। চারিদিকে লাল শাড়ি, জামা, মাথায় ফুল, কেতাদরস্ত সুটবুট জোড়ায় জোড়ায় প্রতিটি টেবিল। তাদের নিচুস্বরে কথাবার্তা, টুংটাং চামচের শব্দ, হাল্কা বিদেশী মিউজিক, বেশ চমৎকার আবেগময় পরিবেশ, সারাদিনের ঘুরাফিরায় আমাদের চেহারার এক করুন অবস্থা!
খুব স্মার্ট ড্রেস পড়া এক সুন্দরী মিষ্টি হাসি দিয়ে প্রত্যকের হাতে একটা করে লাল টকটকে গোলাপ তুলে দিয়ে একটা খালি টেবিলে নিয়ে বসালো। সবার হাতে মেনু দিয়ে অপেক্ষায় থাকলো, আমরা ও পছন্দমত অর্ডার দিয়ে অপেক্ষা করছি… আর সহ্য হচ্ছে না খালি পেট চৌ চৌ করছে। বেশ কিছুক্ষন পর দুই ভদ্রলোক এসে- আমরা এ্যস্ট্রেমেটলী  সরি! এই টেবিলটা বুক করা অলরেডী, আমাদের ভুল হয়েছে।
-আপনারা উপরে যেতে পারেন, ওখানে খালি আছে, কি আর করা ওদের পিছন পিছন ছুটলাম। উপরে উঠতেই চারিদিকে অন্ধকার সিগারেটের ধোঁয়ায় ধুম্রজাল টেবিলে টেবিলে হাল্কা পানীয় বোতল গ্লাস। সব বুঁদ হয়ে পড়ে আছে, ওটা ছিল একটা বার। মাথা আমাদের গরম হয়ে গেল…
-কোথায় নিয়ে এলেন?
– আমরা এখানে ছেলেমেয়ে নিয়ে মাতাল হতে আসিনি।
-স্যরি স্যরি আর কোথাও যে সিট নেই।
কি আর করা! যথেষ্ট আক্কেল হয়েছে এবার ফিরে চল….এইসব দিবসে আর বের হচ্ছি না। ঘরের খাবারের কারোর মোটেই ইচ্ছে নেই। ভাবলাম পাড়ার দোকানের গরম গরম ডালপুরি কিনে এনে খাই।  সবাই বল্লো তাই হোক। পেটের ক্ষুধা চেপে ট্রাফিকের যন্ত্রনায় ঘূর্ণিপাকের মতন এই রাস্তা ওই রাস্তা ঘুরে রাত বারোটা,সারে বারো টায় এসে যখন  পৌঁছালাম ততক্ষনে দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। হায় রে কপাল! ভালো মন্দ মিশ্র একটা অভিজ্ঞতা নিয়ে ঘরে ফিরলাম। আসলে আমাদের রিজিকই ছিল ঘরের খাবার, কি করা আর!

ওমেন্স নিউজ সাহিত্য/